Monday 25 May 2020

ব্যক্তিগত দর্পণতলঃ

সেলফি-র ছবি বদলে দিচ্ছে করোনা! আরও কিছু বদল আসবেই...!

রাধামাধব মণ্ডল

ভারতবর্ষ জুড়ে বদলে যাবে সেলফি-র ছবি! এখন বদলাতে শুরু করেছে জটিলের ভাষাও! মৃত্যুকে কে না ভয় খায়! কে না চেনে মৃত্যুর পরের শূন্যতা! জীবিতরা একটি মৃত্যুকে ভুলতেও নেয়-না সময়! সেটাই ভাবাচ্ছে স্বেচ্ছাচারীদের! নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো প্রয়োগ করতে শুরু করেও ব্যর্থ হচ্ছে একদল চতুর! তাদেরও ভাবাচ্ছে মৃত্যু! বার দরজা খোলা, পেড়িয়ে এসে ক্রমশ শিহরে শাসাচ্ছে মৃত্যু! কে যায়, কে আসে এই প্রেমহীন পৃথিবীতে! প্রতিদিন করোনা ও অন্যান্য নানা কারণে আমাদের মাটির পৃথিবী ছেড়ে একদল নির্বাচিত মানুষ চলে যাচ্ছেন! আরও অনেকে যাবেন! নিশ্চিত সেখানে আমি বা আমার পরিচিতরাও কেউ কেউ থাকবেন! মানব সভ্যতা এমন করে সঙ্কটের মুখোমুখি হবে, কে তা জানতো! এই অনুমান কি করেছিলেন বরেণ্য বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং! এবার কি তাঁর আশঙ্কাই সত্যি হতে চলেছে! কোনো নির্বাচিত যুক্তির উত্তর নেই আমাদের হাতে! সংবাদ মাধ্যম আমাদের গিনিপিগ করছে, ব্যবসায়িক কারণে! একে একে নিভছে দেউলটি! ওপাড় থেকে কার কখন ডাক আসবে কেউ জানি না! এ-র মাঝেই ঠেলাঠেলি করছি, নিজেরা! দেশের ভূখণ্ড নিয়ে নেমেছি হিংসার খেলায়! দূরে বাতিঘরে একজন পুরুষ দেখছেন এক বৃহত্তর নারীকে, যিনি ধরে রেখেছেন এই আলোময় আলোচনার জগৎ! তুমি, আমি দর্শক মাত্র!
অনেকে আজ জেনে গেছেন, জাতীয় অধ্যাপক, লেখক ড. আনিসুজ্জামানের মৃত্যু করোনায় হয়েছে। শব্দ সাধক, অক্ষরচিত্রী দেবেশ রায়ের মৃত্যুও করোনার বাইরে নয়! আরও অনেকে চলে গেলেন, চলে যাবেন করোনার ভয়াবহ আক্রমণে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু স্পষ্ট করেই বলেছে, করোনাকে হয়তো কোনও দিনই নির্মূল করা সম্ভব হবে না। করোনাকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে আমাদের! মৃত্যুর আগে স্টিফেন হকিং যে-আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, করোনার হাত ধরে মানববিশ্ব কি তাহলে সেই বিনাশযুগের দিকেই হাঁটছে! সংক্রমণে অন্য অনেক ভাইরাসের চেয়ে করোনা অনেক দ্রত ছড়াচ্ছে। ভয় তো সেখানেই! লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগেই আক্রান্ত থেকে অনাক্রান্ত মানবশরীরে এসে ঢুকেছে এই অনুজীব।
এ-ই প্রশ্ন গুলোই ঘুরছে, চিন্তার জগতের দখলদারি নিয়ে! ফলে একটু সচেতন মানুষ টিভির থেকে দূরে থাকছেন! ফেসবুক পোস্ট, হোয়াটসঅ্যাপ দেখুন সেখানেও ঘুরছে ভারতবর্ষের রাস্তার ছবি! সে ছবি ভয়ংকর, ভয়াবহ! আমাদের থামিয়ে দিয়েছে! রাস্ট্রের অব্যবস্থার কারণে, পরিকল্পনাহীন একদল নিরন্ন হতদরিদ্র, শ্রমজীবী মানুষ শুখনো রুটির স্বপ্ন নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় কাচ্চাবাচ্চা নিয়ে মর্মান্তিক শান্ত দিশাহীন অন্ধকারের ভিতরে হাঁটছেন! সেই পথেই তারা কেউ কেউ পৌঁছে যাচ্ছেন, না ফেরার দেশে! অথচ চৌকিদার সব দেখে ছবি আঁকছেন করোনা পরবর্তী সমাজের উন্নয়ন নিয়ে! সেই উন্নয়ন চালু রাখতে ট্রেন, বাস, প্লেন চলাচলের ব্যবস্থা হলেও, সেই ভারতবর্ষের মা এখনও রাজপথে হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিচ্ছেন, ঘুমন্ত বুকের শিশুকে টলি ব্যগে শুইয়ে রেখে, টানতে টানতে!
৭৬ এর মন্বন্তরে আমরা ইতিহাসের পাতায় দেখেছি, সেই খাদ্য সঙ্কটের ছবি! ক্ষুদার্থ মা তার বুকের সন্তানকে মাটিতে ফেলে, তার উপর দাঁড়িয়ে গাছের পাতা ছিঁড়ে খাচ্ছে! আজও তেমন ছবি দেখার দিন শুরু হবে না তো! বড়ো ভয় হচ্ছে, এমন ভারতবর্ষকে কখনো দেখিনি আমি! যেখানে আজও ভাতের জন্য, অপেক্ষা করতে গিয়ে অনন্ত নিবিড় মৃত্যুকে বরণ করে হাজার হাজার মানুষ!
আগামীকাল যে আরও অনেক সমবেত স্বপ্নের মৃত্যু হবে আমাদের, সে নিয়ে আর কোনো সন্দেহ নেই! তবে পরিচিত পৃথিবীর মৃত্যু হলে, অপরিচিত আঁধার পৃথিবী আমার জন্য নয়! প্রয়োজন হলে আরও একটা বিপর্যয় আসুক, আলো আঁধারের দূরত্ব মুছতে!

No comments:

Post a Comment