Monday 25 May 2020

আড্ডার বাঙালি কথার বিবর্তন দরকার, জরুরি!

রাধামাধব মণ্ডল 

শুধু মন নয়, শরীরের ভাবও প্রকাশ করে "কথা"। আর কথা'র লিখিত রূপই ভাষা। বাঙালির বলা কথা, মার্জিত লিখিত রূপ বাংলা ভাষা বলা যেতে পারে! আর কথায় আমাদের সম্পদ। মন ও শরীরের যৌথ পারফর্মেন্স আর্ট কথা! জীবনের সমবেত গ্যালারিতে কথা-ই একমাত্র আকর্ষণ বন্ধনের, বন্ধুত্বের! উদ্দেশ্য সকলে মিলে একটি সুস্থ সমাজের মধ্যে থাকা! কিন্তু সেই উদ্দেশ্যে স্তোস্ত্রগীত রচিত হয়েছে " কথা" র মায়াজালেই!
খুনির কথা, বিচারকের কথা, এক নয়! আবার বিচারের জন্য যে পদ্ধতি সেখানেও, কথার মারপ্যাঁচের যুক্তি তর্কের মধ্যে মেধার লড়াইয়েই হয়! এতো সবের  মধ্যেও বাঙালির এই "কথার" চর্চার ধারায় এবার পরিবর্তন আসা জরুরি! তা না হলে তর্কপ্রিয় বাঙালি এবার, জগৎ সভায় যাবার আগেই হারবে! তাই এই মুহূর্তে বাংলার মানুষের কথার বিবর্তন দরকার জরুরি! বিভিন্ন কথায়, এমনি থেকেই কথার টানেই নতুন কথারা এসে গোলমাল পাকিয়ে তৈরি হচ্ছে মনের দূরত্ব! আর এই মনের দূরত্ব ঘনীভূত হতে হতেই নানা রকমের হিংসার মায়াজালে জড়িয়ে ফেলে জীবনকে! সে জীবনে যেমন থাকে না তখন সুস্থতা, তেমনই সে নিজের অস্থিরতা লুকিয়ে রাখতে না পেরে আর এক সুস্থ জীবনকে আঘাত করে ফেলে! বাড়তেই থাকে আঘাত! এই ভাবেই কথার ফুপি হারিয়ে গেলে, আলগা কথার মিথ্যা চারিত্র্যই প্রকট হয়ে গোষ্ঠী সংক্রমণ ছড়িয়ে ফেলে সমাজে! তখনই শুরু হয় দিন দিন নানা আক্রান্ত, আর এই আক্রান্ত হওয়ার খবর আরও কিছু মানুষকে আক্রান্ত করে, অসুস্থ করে, অন্ধকারের ভিতরে নিয়ে চলে উদ্দেশ্যহীন!
ভাঙা, মেদবহুল কথার জরিপের নিত্য নতুন টানেই এলাকার পরিধি বাড়িয়ে নেয়, সে তার নিজের গুণে! ফলে সেই অসুস্থতার চিকিৎসা করা মুসকিল! অসুস্থ কথার চিকিৎসা, একমাত্র আপনিই করতে পারেন। নিজের পরিবর্তন আর অভ্যাস পাল্টে ফেলে! তেমন সমাজতত্ত্বিক, তেমন মনোবিদদের পরামর্শ নিতেও তখন মনের আনন্দ-আয়োজন থাকে না! জটিল অন্তশাসনে বাংলাদেশের সুবর্ণময়, নির্মল নিষ্পাপ ধার্মিক প্রাচীন পরিবেশটি শুরু করে করেছে হারাতে! তাকে ফিরিয়ে আনার যোগ্য উত্তরাধিকার অভিজ্ঞতা, তখন আর কী থাকবে টিকে!
করোনা পরিস্থিতিতে একটি সরকারি শব্দবন্ধ বাংলায় শুধু নয়, গোটা দেশের মানুষের কাছে ঘুরছে। সেটি হলো "সোশাল ডিস্টেন্স", আমার মনে হয়েছে এই শব্দবন্ধটি না ব্যবহার করে " ফিজিক্যাল ডিস্টেন্স" হওয়া উচিত! এমনই কিছু শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে, আমরা বাঙালিরা বড়ো অসচেতন হয়ে পড়েছি।
সেই বৈদিক যুগে ভাষা ব্যবহারের লালিত্য ছিল, তার অনুমান মেলে প্রাচীন সাহিত্যের ধারায়। এখনকার চটকদার কথা, বিজ্ঞাপনী প্রচারমাধ্যম, চাঞ্চল্যকর প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে ভাষার কথ্যরূপ! ভাষায় আনা হচ্ছে কিছু অন্ধকার দেশি-বিদেশি শব্দ। এতেই বিষ্ময়কর লাগছে ভারের, গর্বের এই বাংলা ভাষার প্রকাশ রূপ কথাই । এমন আলগা কথার স্রোত ভাসছে বাংলাতে!
আধুনিক সিনেমার চিত্রনাট্যের রসায়ন, যেন মিলে যাচ্ছে সমাজিক ভাষা ব্যবহারের বিজ্ঞানের সঙ্গেও। ফলে ক্রমশ প্রাঞ্জল ভাষার "ধ্বনির " কথ্যরূপে এসে থেমেছে অশ্লীলতা কথায়! স্বল্পবসনা হাস্যোজ্জ্বল করেছে, চিন্তাশীল বিচক্ষণ বাঙালিকে! আর কবে নড়বে বাঙালি!  কবে জাগবে বাঙালির মনে, কবে আবার একত্রিত হয়ে চিন্তাশীল বিচক্ষণ বাঙালির মুখে ফুটবে প্রাঞ্জল প্রাচীন মিষ্টি বাংলার সুরেলা মধুবাক্যের স্রোত, কথার স্রোত ! সেই কথার বিবর্তনের পথ চেয়ে রয়েছে, আগামী সমাজ! যেখানে জোর করে আধুনিক রসায়নের পোশাক পড়ে বাঙালি আর দাঁড়াবে না! বাঙালির যুক্তি তর্কের মেধার লড়াইয়ে আবার নতুন ভাষা ধ্বনিত হবে কথায়! সে দিনের অপেক্ষায় থাকবো আমরা, গুটিকয়েক পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখা বাঙালি!
আর সেই মগজের খাদ্য ভাষায় আবার আগামীর বাঙালিকে আবার বিশ্বসেরার দরবারে স্থান করে দেবে, এ বিশ্বাস থাকুক! আড্ডার বাঙালি কথা, দীর্ঘ জীবী হোক! পাড়ার ঠেক দীর্ঘ জীবী হোক! পরিবর্তনের মধ্যে দিয়েই জন্ম নিক নতুন কথারা! সমবেত কথার স্রোত বইয়ে চলুক বাঙালির মনের মননে!

No comments:

Post a Comment