Monday 25 May 2020

আমার কৃষি, আমার কৃষক
 

এই অন্ধকার সময়ে গণস্বাস্থ্য ও স্থায়ী চাষবাসের দিকেই নজর দিতে হবে আমাদের!


রাধামাধব মণ্ডল



বড়ো অন্ধকার সময়! আলোও রয়েছে দূরে দাঁড়িয়ে! ক্রমশ অন্ধকার ঘিরে ফেলছে আমাদের! দূরে দাঁড়ানো আলো, কখন কাছে এসে আমাদের পাশে দাঁড়াবে, কেউ জানি না! মনের মধ্যে একটি ঝড় তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে একটানা! সমবেত উদ্যোগেই একদিন ঝড় কাটলে, আমরা যেন আশ্রয়হীন মাঠে না দাঁড়ায় ; তার উদ্যোগ নিতে হবে এখুনি! সেই উদ্যোগেই বাঁচবে আগামী! এই সময়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গুলোর অন্যতম হলো স্বাস্থ্য!  গণস্বাস্থ্যকে বাঁচাতে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি!
বিনা নজরে পড়ে রয়েছে বাংলার সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র গুলো, গ্রামে গ্রামে! সে গুলোর উপর কোনো নজরদারি নেই, নেই চাঙ্গা করার মতো বিকল্প কোনো উদ্যোগও! বাংলা জুড়ে গ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এবার সঙ্কট শুরু হয়েছে! করোনা কালে ও তার পরবর্তী সময়ে বাংলার মানুষ এর জন্য ভুগবে! বামফ্রন্ট সরকারের মাঝখানের সময়েই আচমকা পঞ্চায়েত এলাকায় একটা করে গড়ে তোলা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলো এখন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে ছিল ১০ টি করে বেড পরিসেবা, সঙ্গে সঙ্গে চলতো সর্বক্ষণের জরুরি পরিসেবাও। গ্রামীণ বাংলায় বর্ষাকালে সাপের কামড়ের ভ্যাকসিন, কুকুরের কামড়ের ভ্যাকসিন ছাড়াও নানা রোগের প্রাথমিক চিকিৎসায়, এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ২৪ ঘণ্টার পরিসেবা ছিল বাংলার নিরন্ন মানুষের কাছে বেঁচে থাকার আশ্রয়। আজ সেই আশ্রয় সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে! ২৪ ঘণ্টা দূরে থাক, বেশির ভাগ প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রেই আর খোলা হয় না! দখল হয়ে যাচ্ছে সরকারি সেই সব প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমি! নেই নার্স, নেই ডাক্তার! কোথাও কোথাও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভগ্ন ঘরে চলছে জুয়া, নেশার আড্ডা! পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট, বীরভূমের পাঁড়ুই থানা এলাকার এমন কিছু প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের গায়ে লেগেছে, সন্ত্রাসের আঁতুড় ঘরের তকমা! এই কঠিন সময়ে সেই সব স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলি স্বচল থাকলে, বদলে যেতে গ্রামীণ বাংলার চিকিৎসা ব্যবস্থার চিত্রটাই! করোনা কালে তারাও লাগতো সাধারণ চিকিৎসার কাজে!
এই প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাথার উপর প্রতি ব্লকে এখনও টিমটিম করে জ্বলছে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলো! কম বেশি এই ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এখনও চিকিৎসা পদ্ধতি জারি রয়েছে! তবে সেখানেও পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট স্টাপ, এনএস নেই! তাই মাঝে মাঝেই অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ আসে সেই সব স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে। গ্রাম বাংলার কোনো ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেই, স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ! অথচ এই দুই ডাক্তারদেরই মেডিসিনের পর বেশি প্রয়োজনে লাগে মানুষের! বামফ্রন্টের ক্ষমতার মাঝামাঝি সময়ে থেকেই এক প্রকার সর্বক্ষণ খুলে রাখা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গুলো বন্ধ হয়ে গেছে, তেমনই ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোও পড়েছিল মুখ থুবড়ে! একপ্রকার পরিকাঠামো ছাড়ায় চিকিৎসা করতে হয় ডাক্তার বাবুদের। নেই পর্যাপ্ত ডাক্তার, রোগীর চাপ দিন দিন বাড়ছে। নেই পরিকাঠামো, নেই তেমন ঔষুধও!সবথেকে বড়ো বেশি বিপদজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এক শ্রেণির ডাক্তাররা এই সব ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রশাসনিক কর্তা বিএমওএইচ হয়ে এসে! তাদের দেখ ভালের জন্য কোনো কমিটি নেই। থাকলেও জেলা সিএম ওএইচ এই সব ডাক্তাদের উপর তেমন নজর দেয় না! ফলে বহু বিএমওএইচ মর্জিমাফিক ডিউটি করে! লক্ষ্যও রাখে না হাসপাতালের! সরকারি হাসপাতালের দায়িত্বে থাকলেও, সেই সময়ে তিনি প্রাইভেট প্যাক্টিস নিয়ে ব্যস্ত! সেই সব নানা কারণে এমনিতেই ধুঁকছে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গুলিও! অন্য দিকে এই সব কারণেই জেলা সদরের মহকুমা, কিংবা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গুলোতে দিন দিন বাড়ছে রোগীর চাপ! ফলে চিকিৎসা পরিসেবার মান গিয়ে ঠেকেছে তলানিতে! এই ধারার বদল আনা জরুরি!
  এই কঠিন পরিস্থিতিকে সামলে, করোনা পরবর্তী  ভারতবর্ষের মানচিত্রে অর্থনৈতিক গাড্ডায় ফেলা থেকে দেশকে বাঁচাতে পারে একমাত্র কৃষকরাই! স্থায়ী ফার্মা কালচারের দিকে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। পতিত জমিতে সবুজ ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে কৃষকদের হাত ধরেই! সেই সঙ্গে সরকারি পতিত, খাস, অসমতল জমিকে, ধাপ সৃষ্টি করে, সরকারি সংরক্ষণ করা জমিতে, বনভূমিতে ফলমূলের পাশাপাশি দেশজ চাষবাসের সুযোগ তৈরিতে জোর দিতে হবে, সরকারি উদ্যোগে নামাতে হবে চাষিদের! এক একটি গ্রাম, বা শহরের দত্তক দিতে হবে এলাকা চিহ্নিত করে কৃষকদের হাতেই! তারাই সেই এলাকায় এলাকায় করবে খাদ্য সামগ্রীর সরবরাহ! তাহলেই খাদ্য সঙ্কট ঠেকাতে পারা সম্ভব হবে!
এবছর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও কৃষকের সামনে বড়ো বিপদ! বোর ধানের পাশাপাশি, মাঝে মাঝেই শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে আনাজপাতির! ঘনঘন স্বপ্নের মৃত্যু হচ্ছে কৃষকের ঘরে! শূন্য মাঠে থৈথৈ করছে অসময়ের জল! ফলে ঠিক সময়ে ফলছে না ফসল! করোনা পরিস্থিতির পাশাপাশি, এই লক ডাউনের কারণে কিছু কিছু জায়গায় নতুন করে খাদ্য সঙ্কটেও পড়বে মানুষ! সেই সঙ্কট ঠেকাতে এখুনি রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ। সময়ে বাংলার কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হোক শষ্য বীজ! ১০০ দিনের কাজের রূপায়ণ হোক, কৃষিক্ষেত্রে! অজয়, দামোদর, পদ্মা পাড়ের বহু কৃষি জমিতে দীর্ঘ দিন বন্যায় নদীর বালি পড়ে রয়েছে! নষ্ট হয়েছে কৃষি জমি! সরকারি পদক্ষেপ করে, ১০০ দিনের কাজে সেই সব জমিতে বালি তুলে ফেললে, সেই জমিতে নতুন করে সবুজ ফসল উৎপাদন করতে পারে কৃষকরা!
এই মুহূর্তে গণস্বাস্থ্য ও স্থায়ী চাষবাসই বাঁচাতে পারে একমাত্র এই বিপন্ন বাংলাকে! এবং আমার দেশকে! সরকারি উদ্যোগে এই দুটি ক্ষেত্রে কিছু পরিকল্পিত পরিকল্পনার প্রয়োজন আছে! বাংলার ইতিহাসকে ধরে রাখতে, এখুনি আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ কৃষিতে ও গণচিকিৎসায়! তবেই একের বাংলা, দশের ভারত হয়ে উঠবে!
ব্যক্তিগত দর্পণতলঃ

সেলফি-র ছবি বদলে দিচ্ছে করোনা! আরও কিছু বদল আসবেই...!

রাধামাধব মণ্ডল

ভারতবর্ষ জুড়ে বদলে যাবে সেলফি-র ছবি! এখন বদলাতে শুরু করেছে জটিলের ভাষাও! মৃত্যুকে কে না ভয় খায়! কে না চেনে মৃত্যুর পরের শূন্যতা! জীবিতরা একটি মৃত্যুকে ভুলতেও নেয়-না সময়! সেটাই ভাবাচ্ছে স্বেচ্ছাচারীদের! নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো প্রয়োগ করতে শুরু করেও ব্যর্থ হচ্ছে একদল চতুর! তাদেরও ভাবাচ্ছে মৃত্যু! বার দরজা খোলা, পেড়িয়ে এসে ক্রমশ শিহরে শাসাচ্ছে মৃত্যু! কে যায়, কে আসে এই প্রেমহীন পৃথিবীতে! প্রতিদিন করোনা ও অন্যান্য নানা কারণে আমাদের মাটির পৃথিবী ছেড়ে একদল নির্বাচিত মানুষ চলে যাচ্ছেন! আরও অনেকে যাবেন! নিশ্চিত সেখানে আমি বা আমার পরিচিতরাও কেউ কেউ থাকবেন! মানব সভ্যতা এমন করে সঙ্কটের মুখোমুখি হবে, কে তা জানতো! এই অনুমান কি করেছিলেন বরেণ্য বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং! এবার কি তাঁর আশঙ্কাই সত্যি হতে চলেছে! কোনো নির্বাচিত যুক্তির উত্তর নেই আমাদের হাতে! সংবাদ মাধ্যম আমাদের গিনিপিগ করছে, ব্যবসায়িক কারণে! একে একে নিভছে দেউলটি! ওপাড় থেকে কার কখন ডাক আসবে কেউ জানি না! এ-র মাঝেই ঠেলাঠেলি করছি, নিজেরা! দেশের ভূখণ্ড নিয়ে নেমেছি হিংসার খেলায়! দূরে বাতিঘরে একজন পুরুষ দেখছেন এক বৃহত্তর নারীকে, যিনি ধরে রেখেছেন এই আলোময় আলোচনার জগৎ! তুমি, আমি দর্শক মাত্র!
অনেকে আজ জেনে গেছেন, জাতীয় অধ্যাপক, লেখক ড. আনিসুজ্জামানের মৃত্যু করোনায় হয়েছে। শব্দ সাধক, অক্ষরচিত্রী দেবেশ রায়ের মৃত্যুও করোনার বাইরে নয়! আরও অনেকে চলে গেলেন, চলে যাবেন করোনার ভয়াবহ আক্রমণে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু স্পষ্ট করেই বলেছে, করোনাকে হয়তো কোনও দিনই নির্মূল করা সম্ভব হবে না। করোনাকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে আমাদের! মৃত্যুর আগে স্টিফেন হকিং যে-আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, করোনার হাত ধরে মানববিশ্ব কি তাহলে সেই বিনাশযুগের দিকেই হাঁটছে! সংক্রমণে অন্য অনেক ভাইরাসের চেয়ে করোনা অনেক দ্রত ছড়াচ্ছে। ভয় তো সেখানেই! লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগেই আক্রান্ত থেকে অনাক্রান্ত মানবশরীরে এসে ঢুকেছে এই অনুজীব।
এ-ই প্রশ্ন গুলোই ঘুরছে, চিন্তার জগতের দখলদারি নিয়ে! ফলে একটু সচেতন মানুষ টিভির থেকে দূরে থাকছেন! ফেসবুক পোস্ট, হোয়াটসঅ্যাপ দেখুন সেখানেও ঘুরছে ভারতবর্ষের রাস্তার ছবি! সে ছবি ভয়ংকর, ভয়াবহ! আমাদের থামিয়ে দিয়েছে! রাস্ট্রের অব্যবস্থার কারণে, পরিকল্পনাহীন একদল নিরন্ন হতদরিদ্র, শ্রমজীবী মানুষ শুখনো রুটির স্বপ্ন নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় কাচ্চাবাচ্চা নিয়ে মর্মান্তিক শান্ত দিশাহীন অন্ধকারের ভিতরে হাঁটছেন! সেই পথেই তারা কেউ কেউ পৌঁছে যাচ্ছেন, না ফেরার দেশে! অথচ চৌকিদার সব দেখে ছবি আঁকছেন করোনা পরবর্তী সমাজের উন্নয়ন নিয়ে! সেই উন্নয়ন চালু রাখতে ট্রেন, বাস, প্লেন চলাচলের ব্যবস্থা হলেও, সেই ভারতবর্ষের মা এখনও রাজপথে হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিচ্ছেন, ঘুমন্ত বুকের শিশুকে টলি ব্যগে শুইয়ে রেখে, টানতে টানতে!
৭৬ এর মন্বন্তরে আমরা ইতিহাসের পাতায় দেখেছি, সেই খাদ্য সঙ্কটের ছবি! ক্ষুদার্থ মা তার বুকের সন্তানকে মাটিতে ফেলে, তার উপর দাঁড়িয়ে গাছের পাতা ছিঁড়ে খাচ্ছে! আজও তেমন ছবি দেখার দিন শুরু হবে না তো! বড়ো ভয় হচ্ছে, এমন ভারতবর্ষকে কখনো দেখিনি আমি! যেখানে আজও ভাতের জন্য, অপেক্ষা করতে গিয়ে অনন্ত নিবিড় মৃত্যুকে বরণ করে হাজার হাজার মানুষ!
আগামীকাল যে আরও অনেক সমবেত স্বপ্নের মৃত্যু হবে আমাদের, সে নিয়ে আর কোনো সন্দেহ নেই! তবে পরিচিত পৃথিবীর মৃত্যু হলে, অপরিচিত আঁধার পৃথিবী আমার জন্য নয়! প্রয়োজন হলে আরও একটা বিপর্যয় আসুক, আলো আঁধারের দূরত্ব মুছতে!
আড্ডার বাঙালি কথার বিবর্তন দরকার, জরুরি!

রাধামাধব মণ্ডল 

শুধু মন নয়, শরীরের ভাবও প্রকাশ করে "কথা"। আর কথা'র লিখিত রূপই ভাষা। বাঙালির বলা কথা, মার্জিত লিখিত রূপ বাংলা ভাষা বলা যেতে পারে! আর কথায় আমাদের সম্পদ। মন ও শরীরের যৌথ পারফর্মেন্স আর্ট কথা! জীবনের সমবেত গ্যালারিতে কথা-ই একমাত্র আকর্ষণ বন্ধনের, বন্ধুত্বের! উদ্দেশ্য সকলে মিলে একটি সুস্থ সমাজের মধ্যে থাকা! কিন্তু সেই উদ্দেশ্যে স্তোস্ত্রগীত রচিত হয়েছে " কথা" র মায়াজালেই!
খুনির কথা, বিচারকের কথা, এক নয়! আবার বিচারের জন্য যে পদ্ধতি সেখানেও, কথার মারপ্যাঁচের যুক্তি তর্কের মধ্যে মেধার লড়াইয়েই হয়! এতো সবের  মধ্যেও বাঙালির এই "কথার" চর্চার ধারায় এবার পরিবর্তন আসা জরুরি! তা না হলে তর্কপ্রিয় বাঙালি এবার, জগৎ সভায় যাবার আগেই হারবে! তাই এই মুহূর্তে বাংলার মানুষের কথার বিবর্তন দরকার জরুরি! বিভিন্ন কথায়, এমনি থেকেই কথার টানেই নতুন কথারা এসে গোলমাল পাকিয়ে তৈরি হচ্ছে মনের দূরত্ব! আর এই মনের দূরত্ব ঘনীভূত হতে হতেই নানা রকমের হিংসার মায়াজালে জড়িয়ে ফেলে জীবনকে! সে জীবনে যেমন থাকে না তখন সুস্থতা, তেমনই সে নিজের অস্থিরতা লুকিয়ে রাখতে না পেরে আর এক সুস্থ জীবনকে আঘাত করে ফেলে! বাড়তেই থাকে আঘাত! এই ভাবেই কথার ফুপি হারিয়ে গেলে, আলগা কথার মিথ্যা চারিত্র্যই প্রকট হয়ে গোষ্ঠী সংক্রমণ ছড়িয়ে ফেলে সমাজে! তখনই শুরু হয় দিন দিন নানা আক্রান্ত, আর এই আক্রান্ত হওয়ার খবর আরও কিছু মানুষকে আক্রান্ত করে, অসুস্থ করে, অন্ধকারের ভিতরে নিয়ে চলে উদ্দেশ্যহীন!
ভাঙা, মেদবহুল কথার জরিপের নিত্য নতুন টানেই এলাকার পরিধি বাড়িয়ে নেয়, সে তার নিজের গুণে! ফলে সেই অসুস্থতার চিকিৎসা করা মুসকিল! অসুস্থ কথার চিকিৎসা, একমাত্র আপনিই করতে পারেন। নিজের পরিবর্তন আর অভ্যাস পাল্টে ফেলে! তেমন সমাজতত্ত্বিক, তেমন মনোবিদদের পরামর্শ নিতেও তখন মনের আনন্দ-আয়োজন থাকে না! জটিল অন্তশাসনে বাংলাদেশের সুবর্ণময়, নির্মল নিষ্পাপ ধার্মিক প্রাচীন পরিবেশটি শুরু করে করেছে হারাতে! তাকে ফিরিয়ে আনার যোগ্য উত্তরাধিকার অভিজ্ঞতা, তখন আর কী থাকবে টিকে!
করোনা পরিস্থিতিতে একটি সরকারি শব্দবন্ধ বাংলায় শুধু নয়, গোটা দেশের মানুষের কাছে ঘুরছে। সেটি হলো "সোশাল ডিস্টেন্স", আমার মনে হয়েছে এই শব্দবন্ধটি না ব্যবহার করে " ফিজিক্যাল ডিস্টেন্স" হওয়া উচিত! এমনই কিছু শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে, আমরা বাঙালিরা বড়ো অসচেতন হয়ে পড়েছি।
সেই বৈদিক যুগে ভাষা ব্যবহারের লালিত্য ছিল, তার অনুমান মেলে প্রাচীন সাহিত্যের ধারায়। এখনকার চটকদার কথা, বিজ্ঞাপনী প্রচারমাধ্যম, চাঞ্চল্যকর প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে ভাষার কথ্যরূপ! ভাষায় আনা হচ্ছে কিছু অন্ধকার দেশি-বিদেশি শব্দ। এতেই বিষ্ময়কর লাগছে ভারের, গর্বের এই বাংলা ভাষার প্রকাশ রূপ কথাই । এমন আলগা কথার স্রোত ভাসছে বাংলাতে!
আধুনিক সিনেমার চিত্রনাট্যের রসায়ন, যেন মিলে যাচ্ছে সমাজিক ভাষা ব্যবহারের বিজ্ঞানের সঙ্গেও। ফলে ক্রমশ প্রাঞ্জল ভাষার "ধ্বনির " কথ্যরূপে এসে থেমেছে অশ্লীলতা কথায়! স্বল্পবসনা হাস্যোজ্জ্বল করেছে, চিন্তাশীল বিচক্ষণ বাঙালিকে! আর কবে নড়বে বাঙালি!  কবে জাগবে বাঙালির মনে, কবে আবার একত্রিত হয়ে চিন্তাশীল বিচক্ষণ বাঙালির মুখে ফুটবে প্রাঞ্জল প্রাচীন মিষ্টি বাংলার সুরেলা মধুবাক্যের স্রোত, কথার স্রোত ! সেই কথার বিবর্তনের পথ চেয়ে রয়েছে, আগামী সমাজ! যেখানে জোর করে আধুনিক রসায়নের পোশাক পড়ে বাঙালি আর দাঁড়াবে না! বাঙালির যুক্তি তর্কের মেধার লড়াইয়ে আবার নতুন ভাষা ধ্বনিত হবে কথায়! সে দিনের অপেক্ষায় থাকবো আমরা, গুটিকয়েক পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখা বাঙালি!
আর সেই মগজের খাদ্য ভাষায় আবার আগামীর বাঙালিকে আবার বিশ্বসেরার দরবারে স্থান করে দেবে, এ বিশ্বাস থাকুক! আড্ডার বাঙালি কথা, দীর্ঘ জীবী হোক! পাড়ার ঠেক দীর্ঘ জীবী হোক! পরিবর্তনের মধ্যে দিয়েই জন্ম নিক নতুন কথারা! সমবেত কথার স্রোত বইয়ে চলুক বাঙালির মনের মননে!