Wednesday 21 August 2019


কোলাজ সম্রাট তপন সাহা


 রাধামাধব মণ্ডলঃ কলকাতাঃ আজ তিনি একটি নাম। এবাংলায় তিনিই কোলাজ শিল্পের সম্রাট। তাঁকে নিয়ে একাধিক সংবাদ মাধ্যম আজ উদ্মাদনার তুফান তুলেছে। বার বার তাঁর নাম উঠেছে জাতীয় সম্মানের তালিকায়! তিনি শিল্পী হওয়ার নেশাতে হুগলী থেকে পালিয়ে এসে, একা একা দশ বছর কাটিয়ে গেছেন শান্তিনিকেতনে। তিনি শিল্পী তপন সাহা। তখন শান্তিনিকেতনের কলাপুকুর ডাঙায় তেমন বসতি গড়ে ওঠেনি। ধূ ধূ মাঠ। সেখানেই একটি মাটির বাড়িতে থেকে ঘুরে বেড়িয়ে শিখেছেন ভূঁইফোড় শিল্পীর প্রাথমিক শিল্পের পাঠ। পিতা যদুলাল সাহা। মা ননীবালা সাহার পাঁচ কন্যা ও তিন সন্তানের ছোট তপন সাহা। ১৯৬৪ সালের ২২শে এপ্রিল (বাংলা ৮ই বৈশাখ) হুগলি জেলার চুঁচুড়া শহরে তাঁর জন্ম। ছোট থেকেই জীবন যন্ত্রণার সঙ্গে লড়েছেন তপনবাবু। ছোট বেলায় শিল্পের প্রাথমিক পাঠ নিয়েছিলেন  সমর বন্দ্যোপাধ্যায় ও নীলয় ঘোষের কাছ থেকে। পরে কোলাজ নিয়ে, টেরাকোটার কাজ এবং কাটুম কুটুম তিনি নিজে নিজেই শিখেছেন। বৌদ্ধিক চেতনায় তিনি আজ কোলাজ সম্রাট। তিনি রং ছাড়া রঙিন ছবির কারিগর! সারা রাজ্যে তাঁর  একাধিক বার কোলাজ শিল্পের প্রদর্শনী হয়েছে। মূলীবাঁশের বেড়ার গোটা পাঁচেক ঘর,মাথার ওপরে পোড়ামাটির টালি,কাঁচামাটির মেঝে যেটি পরিচিত ছিল অরবিন্দ মাস্টরের স্কুল (গান্ধীকলোনী প্রাথমিক বিদ্যালয়)নামে পরিচিত। বছর সাড়ে তিনের একটি বাচ্চার বগলে একটি চটের বস্তা ,কাঠের ফ্রেমে বাঁধানো একটি কালো চকচকে শ্লেট আর একটি চক পেনসিল।বাড়ির গলি থেকে, হাত ধরে রাস্তা পার করে ছেড়ে দিলো, অজানা অচেনা এক মাষ্টারমশায়ের কাছে। পরের দিনও সেই হাত ধরা-ছাড়ার একই চিত্র। ততক্ষণে, চোখের জলে মাটি ভিজতে শুরু করেছে। উপায়-অন্তর না দেখে সেই বালকটির সাথেই, বাইরে অপেক্ষায় থাকতো তার মা,কখনো বা দুই দিদির কেউ একজন, দিনের পরদিন।কিন্তু কতদিনই বা সম্ভব। এভাবে সময়ের আয়েশ করার । সময়ের যে বড়ই টান। সাতজনের সংসারে ভীষন জরুরি ছিল দু’পেয়ে গরুর থেকেও চারপেয়ে গরুর বেশি দেখভাল করা। তা একদিন হয়েছে কি,সেই বালকটির মা কখন যে চুপিসাড়ে উঠে চলে এসেছে, তা টের পেতেই ছেলেটিও দে দৌড়। কিন্তু দে দৌড় দিলে কি হবে ? তার সেই ছোট্ট পায়ের সে দৌড় হাত বাড়িয়েই ধরে ফেললেন মাষ্টারমশাই ডাক্তার অরবিন্দ সাহা। আর ধরেই সপাটে পিঠের ওপর বসিয়ে দিলেন হাতের পাঁচ আঙ্গুলের দাগ।শব্দটা বেশ জোরেই হয়েছিলো। তারপর ঠিক কি হয়েছিলো আজ আর মনে পড়ে না শিল্পী তপন সাহার।স্কুলের ঘন্টা শেষ হলো। মাষ্টারমশায়ের বাড়িতে আসার খবর পেয়ে, পাশের বাড়ির কেরোসিন তেলের ড্রামের মধ্যে ঢুকে পড়েও রেহাই মিললো না তার। সেখান থেকেও তুলে নিয়ে এলো সেই মাষ্টারমশায়ই। পিঠের দাগে হাত বুলিয়ে আদর করে আঁকতে বসালো একটি কাপ প্লেট।পথ খুঁজে নেবার, উদ্বোধনের ফিতেটা কেটে দিয়ে শিল্পের আঁতুরঘরে একটা প্রদীপ জ্বালিয়ে দিলেন তিনি। তিনি আজ এবাংলার কোলাজ সম্রাট তপন সাহা।

No comments:

Post a Comment